রবিবার, ১২ জুলাই, ২০২০

ভিপিএন/VPN

ভিপিএন ফুল মিনিং হচ্ছে, 'ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক' যখন একটি পাবলিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একাধিক কম্পিউটারকে (বা আলাদা নেটওয়ার্ক) একই নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়, তখন তাদের ভিপিএন বলে। নিরাপদ যোগাযোগ এবং ডাটা অ্যানক্রিপ্ট করার একটি পদ্ধতি হিসেবে এটি কাজে লাগে। মানে ভিপিএন আপনার মেশিনকে একটি ভার্চুয়াল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারে এবং আপনার পাঠানো সব ডাটা দ্রুততার সঙ্গে এনক্রিপ্ট করে ফেলে অর্থাৎ পাবলিক ডোমেইন থেকে লুকিয়ে রাখে এবং এটা আপনার ব্রাউজিং হিস্টোরির কোনো ট্র্যাক রাখে না। কাজেই আপনি অনলাইনে পুরোপুরি নিরাপদ। যদিও বেশির ভাগ ভিপিএন সার্ভিসের জন্য টাকা গুনতে হয়। তবে কিছু ফ্রি সার্ভিসও আছে। ফ্রি ভিপিএন সার্ভিসের কিছু উপকারিতা রয়েছে।

সুবিধা: সম্পূর্ণ ফ্রি সার্ভিস। এর জন্য আপনাকে কোনো সার্ভিস চার্জ গুনতে হবে না। অ্যাডবিহীন সার্ভিস অর্থাৎ কোনো ধরনের বিরক্তিকর অ্যাড নেই। ব্লক হওয়া সাইটে নিরাপদে ভিসিট করতে পারবেন। হ্যাকারদের হাত থেকে মুক্তি। এর মাধ্যমে অনলাইনে আপনার আইপি লুকায়িত থাকবে। ফলে হ্যাকারদের কবলে পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আপনার ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী আইপিএস থেকে নেটের ফুল স্পিড পাবেন। তবে কিছু অসুবিধাও আছে। যেমন ধরুন, এটি সম্পূর্ণভাবে ইন্টানেটের ওপর নির্ভরশীল। এটি আপনাকে টরেন্ট ফাইল ডাউনলোডের সুবিধা দেবে না। চলুন কিছু ফ্রি ভিপিএন সার্ভিস সম্পর্কে জানা যাক।

ProXPN সার্ভিস: অতি জনপ্রিয় সার্ভিস। এটি আপনি উইন্ডোজ এবং ম্যাকে ব্যবহার করতে পারবেন। এটি ব্যবহারের জন্য আপনাকে ছোট একটি অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করতে হবে এবং এটি দ্বারাই ভিপিএন কানেক্ট করতে হবে।

Cybershost সার্ভিস: কেবল উইন্ডোজ পিসিতে ব্যবহার করতে পারবেন। এটি আপনাকে মাসে ১ জিবিএন ক্রিপ্টেড ডাটা ট্রান্সফারের সুবিধা দেবে। সার্ভিসটি ব্যবহার করার জন্য আপনাকে একটি ফ্রি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। তবে এক্ষেত্রে আপনি পছন্দ মতো সার্ভার বাছাই করতে পারবেন না। ওয়েব সার্ফিংয়ের ক্ষেত্রে এটি ভালো একটি সার্ভিস।

Hotspot Shield সার্ভিস: এটি উইন্ডোজ ম্যাক এবং আইফোনে ব্যবহার উপযোগী। বলতে পারেন এটি একটি সেলফ সাপোর্ট সার্ভিস। এটি অ্যাড ফ্রি নয়। অ্যাডের মাধ্যমে ওরা ফান্ড সংগ্রহ করে।

SecurityKiss সার্ভিস: এটি আপনাকে প্রতিদিন ৩০০ মেগাবাইট ব্যান্ডউইথ দেবে। এ সার্ভিসটি অ্যাঙ্সে করার জন্য আপনাকে securitykiss সফটওয়্যার দরকার হবে এবং এটি কেবল উইন্ডোজে ব্যবহারযোগ্য। যদি সিকিউরিটির ব্যাপারে খুঁতখুঁতে হন তাহলে আপনার জন্য পেউড ভিপিএন ব্যবহার করার পরামর্শ থাকবে।


সহজভাবে বোঝার জন্য প্রথমে ভিপিএন কি সেটাকে একটু সাইডে রাখি। আর নজর দেই আমাদের ইন্টারনেট কানেকশন কিভাবে কাজ করে তার উপরে!

যখন আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য ঐ সাইটটির লিঙ্ক ব্রাউজারে প্রবেশ করান, প্রথমে ডোমেইন নেম থেকে আইপি অ্যাড্রেস খুঁজে বেড় করা হয়। আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডারের একটি ডিএনএস (ডোমেইন নেম সার্ভার) সার্ভার রয়েছে, যেখানে সকল ডোমেইন নেমের একটি ডাটাবেজ থাকে। অবশ্যই শুধু কোন নেম ব্যবহার করে কোন ওয়েব সার্ভার কানেক্ট করা সম্ভব নয়, অবশ্যই আইপি অ্যাড্রেস খুঁজে পেতে হবে তবেই ওয়েব সার্ভারের সাথে কানেক্ট হওয়া সম্ভব।

তো আপনার প্রথম রিকোয়েস্ট’টি ডিএনএস সার্ভারের কাছে যায় আইপি অ্যাড্রেস খুঁজে পাওয়ার জন্য। তারপরে আইপি অ্যাড্রেস পেয়ে গেলে আপনার রিকোয়েস্ট আপনার আইএসপির আইপি এবং ফায়ারওয়াল অতিক্রম করে তবেই ইন্টারনেট সার্ভারের কাছে গিয়ে পৌছায়। এখন যদি আপনার আইএসপি কোন সাইটের নেম বা আইপি অ্যাড্রেস ব্লক করে রাখে, সেক্ষেত্রে আপনার রিকোয়েস্ট ঐ ওয়েব সার্ভারের কাছে পৌঁছানর পূর্বেই আইএসপির ফায়ারওয়াল আপনার রিকোয়েস্টকে ফিল্টার করে ব্লক করে দেবে। এখন শুধু কিন্তু আইএসপিই সাইট ব্লক করে রাখে না, অনেক সময় ঐ ওয়েবসাইট’টিও আপনার লোকেশনকে ব্লক করে রাখে। যেমন আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে নেটফ্লিক্স ভিজিট করেন ,সেক্ষেত্রে আপনাকে কখনোই পরিষেবা প্রদান করা হবে না, কেনোনা নেটফ্লিক্স সার্ভার আপনার জিও লোকেশন ব্লক করে রেখেছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভিপিএন কিভাবে যেকোনো সাইট আন-ব্লক করতে পারে? — পূর্বে কি হতো, আপনার কম্পিউটার থেকে ডাইরেক্ট রিকোয়েস্ট গিয়ে আইএসপি কম্পিউটার হয়ে তারপরে ওয়েব সার্ভারে পৌঁছাত। কিন্তু ভিপিএন ব্যবহার করলে, আপনার কম্পিউটার প্রথমে আইএসপির সাথে কানেক্ট হবে কিন্তু এরপরে ভিপিএন সার্ভারের কাছে সকল রিকোয়েস্ট যাবে, ভিপিএন সার্ভার হয়ে তারপরে সেটা ওয়েবসাইট সার্ভারের কাছে রিকোয়েস্ট পৌঁছাবে।

আগে কি হতো, যে আইপি গুলো আইএসপি থেকে ব্লক ছিল সেগুলতে অ্যাক্সেস করা যেতো না, কিন্তু ভিপিএন ব্যবহার করার পরে যেকোনো আইপি অ্যাক্সেস করা যায়, কেনোনা ঐ আইপিতে রিকোয়েস্ট সরাসরি আইএসপির মাধ্যমে করায় হয় না! আপনার আইএসপি শুধু মাত্র ভিপিএন আইপির সাথে কানেক্টেড থাকবে, কিন্তু এক প্রাইভেট সুরঙ্গ দিয়ে আপনি আর ভিপিএন সার্ভারের মধ্যে কোন ফাইল বা কোন সাইট অ্যাক্সেস করবেন সেটা আইএসপি বুঝতেই পারবেনা। কেনোনা সকল ডাটা গুলো এনক্রিপশন করে ট্র্যান্সমিট করা হয়, ফলে আপনার আইএসপি শুধু দেখতে পাবে আপনি ভিপিএন এর সাথে কানেক্টেড রয়েছেন, কিন্তু এর ভেতর দিয়ে আপনি কি করছেন সেটা পড়া সম্ভব নয়।

আবার ওয়েব সার্ভারের কাছেও ভিপিএন আইপি থেকে রিকোয়েস্ট যায়, ভিপিএন সার্ভার পৃথিবীর যেকোনো দেশে অবস্থিত থাকতে পারে, আপনি যদি ইউএসএ সার্ভার ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের যেকোনো ব্লক থাকা সাইট আন-ব্লক হয়ে যাবে। ওয়েব সার্ভার নিজেও আপনার সঠিক জিও লোকেশন পাবে না।

চলুন আরো ব্যাস্তব উদাহরণ দেওয়ার মাধ্যমে ভিপিএন টার্মটিকে খোলাসা করার চেষ্টা করি। মনে করুণ, আপনার বাসা থেকে আপনাকে বাজারে যাওয়া নিষেধ (যেমন আইএসপি যেকোনো সাইট ব্লক করে রাখে), তো অবশ্যই বাসা থেকে বেরনোর আগে আপনার অবিভাবক আপনাকে দেখে ফেলবে এবং আপনাকে আটকিয়ে দেবে।

কিন্তু আপনার ভাইয়ের বাসা থেকে বাজারে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে, তো আপনি যদি ভাইকে বাজার থেকে কিছু জিনিষ আনতে বলেন সে সহজেই বাজারে গিয়ে আপনাকে এনে দেবে। যদি সে কৌশলে সিক্রেট প্যাকেটে (যেমন ভিপিএন এনক্রিপশন ব্যবহার করে ডাটা ট্র্যান্সমিট করে) আপনাকে জিনিষটি এনে দেয়, তাহলে আপনার অবিভাবকও বুঝতে পারবে না, আপনাকে কি এনে দিলো!

আবার মনে করুণ, আপনার বাসা থেকে তো বেড় হওয়া যাবে, কিন্তু মার্কেটের নির্দিষ্ট দোকানদার আপনাকে দোকানে যেতে নিষেধ করেছে (যেমন- যেকোনো ওয়েবসাইট আপনার লোকেশন বা আইপি ব্লক করে রেখেছে) , কিন্তু আপনার ঐ দোকান থেকেই জিনিষ দরকার, তাহলে কি করবেন? এখানেও আপনার ভাইকে পাঠিয়ে দিতে পারেন, অবশ্যই আপনার ভাইকে দোকানদার কিছু বলবে না, এবং আপনি ঐ জিনিষটি পেয়ে যাবেন। তো এখানে ভিপিএন ঠিক আপনার ভাইয়ের মতোই কাজ করে।

ভিপিএন নিয়ে আশা করছি এবার একটি বেসিক আইডিয়া হয়ে গেছে সহজেই, রাইট? এখন যদি প্রশ্ন করে কেন ভিপিএন ইউজ করবেন, ওয়েল অলরেডি উত্তর উপরের প্যারাগ্রাফ গুলোতে রয়েছেই, আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে আমার লেখা কিছু পোস্ট সাজেস্ট করবো, নিচের লিংক গুলো অনুসরণ করুন;

আপনি যখন কোণ ভিপিএন বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটয়ার্কে যুক্তহোন তখন আপনার কম্পিউটারের সাথে বাহিরের পৃথিবীর সকল ইন্টারনেট কানেকশন বিচ্ছিন্ন হয়, শুধুমাত্র ভিপিএন এর সাথে আপনার ডিভাইসটি যুক্তথাকে। আপনি যখনই কোন সাইটে ঢুকার চেষ্টা করেন, তখন ভিপিএন প্রোভাইডারা আপনার পক্ষ থেকে তাদের নিজের আলাদা আইপি দিয়ে সেই সাইটে ঢুকে, আর ডাটাগুলো আপনার ব্রাউজারে পাঠায়। যেহেতু আপনি সরাসরি রিকুয়েস্ট পাঠাচ্ছেন না, তাই আপনি ব্লক করা সাইটও দেখতে পারবেন ভিপিএন দিয়ে।

আরেকটা উদাহরণ দেই, মনে করেন, আপনি একজন এমপিকে একটা চিঠি দিতে চান, কিন্তু এমপির কাছে যাওয়া আপনার জন্য নিষেধ, তখন আপনি একজন পিয়নকে দিয়ে চিঠিটা পাঠালেন, যেহেতু পিয়ন এমপির কাছে যেতে বাধা নেই, আর পিয়নও এমপি কি উত্তর দিলেন, সেটা আপনাকে জানালো। তাহলে আপনার আর এমপির মাঝে পিয়ন যেভাবে কাজ করল, ভিপিএনও ঠিক সেই কাজ করে, আপনার ও ব্লকড সাইটের মাঝে।

ফ্রি ভিপিএন এর মধ্যে Windscribe VPN সব থেকে বেশি ডাটা ফ্রি দেয় আর স্পিড ও বেশ ভালো মনে হইছে। এছাড়া আর আছে, ফ্রি ভিপিএন লিখে সার্চ দিলেই পাবেন, নিজে কয়েকটা ট্রাই করলে বুঝতে পারবেন কোনটা আপনার জন্য ভালো।



VPN এর লাভ ও সুবিধে:

একটি ভিপিএন কেন ব্যবহার করবেন বা ভিপিএন ব্যবহার করে আপনার কি কি লাভ হবে, সেটা নিচে আমি আপনাদের এক এক করে বলে দিচ্ছি।

  • যখন আমরা একটি VPN service এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করি, তখন আপনার সকল পার্সোনাল ডাটা (personal data) সুরক্ষিত রাখা হয়। এর ফলে, বিভিন্ন data বা information, হ্যাকার দেড় চোখ থেকে দূরে থাকে।
  • VPN ব্যবহার কোরে, আমরা আমাদের অনলাইন পরিচয় লুকিয়ে রাখতে পারি। মানে, আপনি কোন জায়গা বা দেশ থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, সেটা লুকানো সম্ভব। কিন্তু, যেই কোম্পানির ভিপিএন সার্ভিস ব্যবহার করছেন, তারা কিন্তু আপনার আসল IP address ও লোকেশন অবশই জানবেন।
  • VPN ব্যবহার করে আমরা যেকোনো blocked website বা app নিজের মোবাইল ও কম্পিউটারে ব্যবহার করতে পারি। বেশিরভাগ লোকেরা, একটি ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার কোরে বিভিন্ন blocked websites গুলিতে প্রবেশ করেন।
  • আপনারা নিজের network এর IP address অনেক সহজেই বদলে, অন্য একটি country র IP address এ রূপান্তর করতে পারবেন।
  • কিছু কিছু প্রিমিয়াম ভিপিএন (premium vpn) আপনার ইন্টারনেটের স্পিড বাড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু, আবার কিছু ফ্রি ভিপিএন আপনার ইন্টারনেট স্পিড কমিয়েও দিতে পারে।

তাহলে, যদি বলা হয়, “vpn এর লাভ কি কি“, তাহলে এগুলি কিছু সেরা লাভ রয়েছে ভিপিএন এর। তবে, আপনি যদি কিছু খারাপ উদ্দেশ্যে vpn ব্যবহার করার কথা ভাবছেন, তবে এই ভুল কখনোই করবেননা।

কারণ, police বা আইনের অধিকারীরা vpn company থেকে আপনার আসল IP address অনেক সহজেই বেড় করে নিতে পারবেন।

তাই, কেবল নিজের ইন্টারনেট কানেক্শনকে হ্যাকার (hacker) এবং ডাটা ও প্রাইভেসী চোর দেড় থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য vpn অবশই ব্যবহার করুন।

VPN এর ব্যবহার:

যদি আপনি আপনার ঘরে যেকোনো secure এবং private নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, তাহলে vpn এর কোনো প্রয়োজন নেই। মানে, যদি আপনি একটি password protected wifi hotspot থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, তাহলে, সেটা secure এবং তখন ভিপিএন এর কোনো প্রয়োজন নেই। তাছাড়া, যদি আপনারা কোনো open এবং public wifi hotspot ব্যবহার করছেন যেমন, railway station, কোনো hotel এ বা flight বা train এ, তখন সেই open নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে যেকোনো hacker আপনার network বা system হ্যাক করতেই পারে। তাই, মনে রাখবেন যে যেকোনো public এবং open নেটওয়ার্ক যেটা অচেনা অনেক ব্যক্তি একসাথেই ব্যবহার করছেন, সেই নেটওয়ার্ক কখনোই সুরক্ষিত না এবং তখন আপনার একটি VPN ব্যবহার করা উচিত। এমনিতে, পারলে সবসময় একটি vpn ব্যবহার করে ইন্টারনেটে কানেক্ট হওয়াটা নিরাপদ (safe)। তাহলে, Vpn কেন এবং কখন ব্যবহার করবেন, সেটা হয়তো আপনারা বুঝে গেছেন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন