কোয়ান্টাম মেকানিক্স আসলে ঠিক কী এবং কিভাবে কাজ করে তা বোঝার জন্য অনেক বিজ্ঞানী অনেকভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু এসবের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো Copenhagen
interpretation। এটি প্রধানত দুইজন প্রবাদপ্রতিম
বিজ্ঞানী দিয়েছিলেন। একজন নীলস বোর এবং অন্যজন হলেন হাইজেনবার্গ। এই মতবাদ অনুসারে, বাহ্যিক সিস্টেমে থাকা কোনো বস্তু একইসময়ে একাধিক অবস্থায় থাকতে পারে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সে কোনো বস্তুকে তরঙ্গ দিয়ে বোঝানো হয়। আর এটি কোনো একটি তরঙ্গ নয়। একাধিক তরঙ্গের উপরিপাতের (superposition) ফল হলো এই বস্তু। এই মতবাদ বলছে, কোনো বস্তু যেকোনো সময় এই উপরিপাতিত তরঙ্গের সবগুলি অবস্থায় একই সঙ্গে থাকতে পারে। এখন আমরা যদি ওই বস্তুকে স্টাডি করতে যাই বা কোনোকিছু মাপতে যাই তখন সিস্টেমের কাঠামোটা ভেঙে যায় এবং আমরা বস্তুটিকে বাধ্য করি কোনো একটা অবস্থা বেছে নিতে। এই ঘটনাকে wave function
collapse বলে। এরফলে বস্তুটি এতগুলি তরঙ্গের থেকে যেকোনো একটি তরঙ্গ বেছে নিয়ে ওই অবস্থায় থাকতে শুরু করে। আবার আমরা যদি সিস্টেমটিকে
স্টাডি করা বন্ধ করে দেই তখন আবার সিস্টেমটি আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। মানে বস্তুটি আবার উপরিপাতিত তরঙ্গগুলির সবগুলিতে একইসঙ্গে একই সময়ে থাকতে শুরু করে।
যদি সাদা
বাংলায় গল্পের
ছলে বোঝানো
হয় তাহলে
ব্যাপারটা অনেকটা
এরকম দাঁড়ায়।
ধরা যাক স্কুলের কোনো একটি
ক্লাসরুম। নতুন
পিরিয়ডের ঘণ্টা
সবে পড়েছে।
মাস্টার এখনো
ক্লাসে আসেনি।
তো এই অবস্থায় কী কী ব্যাপার ঘটতে পারে?
যারা খুব ভালো ছাত্র তারা
বই খুলে
পড়াশোনা করতে
পারে। কিছু
শান্ত ছেলেপিলে
চুপচাপ বসে থাকতে পারে। কিছু
ছাত্রী, কার নেলপলিশটা ভালো এই নিয়ে আলোচনা করতে
পারে। কিছুজন
কাটাকুটি খেলতে
পারে। কিছুজন
নতুন যে সিনেমাটা বেরিয়েছে সেটা
নিয়ে আলোচনা
করতে পারে।
দু একজন
আছে যারা
একটু চাপা
তারা নিজের
মনে মোবাইল
নিয়ে গেম খেলতে পারে। কেউ তার ভালোবাসার বন্ধু
বা বান্ধবীর
দিকে তাকিয়ে
ইশারায় বা মোবাইলে চ্যাটে কথা বলতে পারে। পেছনের
বেঞ্চের দুজন
ছেলে নিজেদের
মধ্যে মারামারি
ও করতে
পারে। ইত্যাদি
ইত্যাদি। এখন ক্লাসে যদি মাস্টার
ঢুকে পড়ে তখন পুরো ক্লাস
শান্ত হয়ে মাস্টারের দিকে তাকিয়ে
মনোযোগী হবার
চেষ্টা করবে।
মাস্টার বেরিয়ে
গেল আবার
যে কে সেই। এখন ক্লাসটাকে
যদি একটা
বস্তু ভাবি
আর বিভিন্ন
কার্যকলাপ কে যদি একটা একটা
তরঙ্গ (wave function বা eigen state) ভাবি,
তাহলে এটা বলা যেতে পারে
পুরো ক্লাস
একইসঙ্গে একই সময়ে বিভিন্ন দশায়
বা state এ আছে। কিন্তু যেই আমরা বাইরে থেকে
ক্লাসটাকে দেখতে
গেলাম (এখানে
মাস্টার ক্লাসে
এলো) তখুনি
ক্লাসটি একটিমাত্র
wave function বেছে নিলো।
যে state এ মাত্র কয়েকজন ছেলেমেয়ে
ছিল সেই state এ এখন সবাই
চলে এলো।
ঠিক এই জায়গাতেই শ্রয়ডিঙ্গার এর আপত্তি। কেন আমাদের observatiom বা act of measurement এর উপর সিস্টেমের অবস্থা নির্ভর করবে? শ্রয়ডিঙ্গার
superposition মানলেও এইটা মানতে পারছিলেন না। তিনি তখন মনে মনে একটা পরীক্ষার কথা চিন্তা করলেন। যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় Thought experiment। এইরকম পরীক্ষা বাস্তবে নাও সফল হতে পারে কিন্তু পরীক্ষার পদ্ধতি এবং ফলাফল যুক্তিপূর্ণ হওয়া চাই। ফিজিক্সে এমন অনেক Thought experiment আছে যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে কোনো কোনো থিওরি দাঁড় করাতে।
যাইহোক শ্রয়ডিঙ্গারের
গল্পে ফেরা যাক। তিনি একটা বাক্স কল্পনা করলেন যার ভেতরটা বাইরে থেকে দেখা যায় না। এখন তিনি একটা জীবিত বেড়াল, একশিশি বিষাক্ত গ্যাস, একটা তেজস্ক্রিয় পদার্থ (ধরা যাক ইউরেনিয়াম U) আর একটা তেজস্ক্রিয়তা
মাপার যন্ত্র গাইগার মুলার কাউন্টার জোগাড় করলেন। এবার সবগুলি জিনিস বাক্সের মধ্যে একটু কায়দা করে ভরে দিয়ে বাক্সটা বন্ধ করার দেওয়া হলো। U সারাক্ষণ বিকিরণ করতে থাকবে বিভিন্ন কণা বা রশ্মি। আর কাউন্টার যেটা ডিটেক্ট করবে তার সম্ভাবনা হচ্ছে 50%। মানে U থেকে 100 টা তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হলে কাউন্টার ওর মধ্যে 50 টা ডিটেক্ট করতে পারবে। এখন যে কায়দাটা করা হলো সেটা হচ্ছে বিষাক্ত গ্যাসের শিশি টা আর ডিটেক্টরের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করা। মানে কাউন্টার যদি বিকিরণ শনাক্ত করে তবে বিষাক্ত শিশিটি খুলে যাবে। আর সেই বিষের প্রভাবে বেড়ালটি মারা যাবে। আর যদি শনাক্ত না করতে পারে তবে কিছুই ঘটবে না, বেড়ালটিও বহাল তবিয়তে বেঁচে থাকবে। পরীক্ষাটা অনেকটা নিচের ছবির মতো।
বাক্স বন্ধ করার খানিক্ষণ পরে আপনাকে জিজ্ঞেস করা হল, বিড়ালটি কি অবস্থায় আছে? আপনি বলবেন হয় বেড়ালটি মৃত নয়তো এখনো বেঁচে আছে। এবার বাক্স খুলে দেখা যাবে সেই একই ব্যাপার। হয় বিড়ালটি বেঁচে আছে নয় বিড়ালটি মরে গেছে। সুতরাং যতক্ষণ আপনি বাক্স খুলে না দেখছেন ততক্ষণ আপনি সঠিক করে বলতে পারবেন না বেড়ালটি বেঁচে আছে না মরে গেছে। স্বাভাবিক ব্যাপার তাই না? কিন্তু এবার আগের মতবাদটা (Copenhagen interpretation) একটু মনে করুন। যখন আপনি বাক্স খুলে দেখছেন না তখন বাক্সের ভেতরে থাকা বিড়ালটির একইসঙ্গে দুটি অবস্থায় থাকার কথা! মানে মতবাদ অনুযায়ী বেড়ালটি একইসঙ্গে জীবিত এবং মৃত অবস্থায় থাকার কথা! অথচ বক্সটি না খুললেও আপনি জানেন বেড়ালটি হয় জীবিত নয়তো মৃত অবস্থায় থাকবে।কিন্তু একইসঙ্গে জীবিত ও মৃত থাকা সম্ভব নয়। এই পরীক্ষাটি “শ্রয়ডিঙ্গারের ক্যাট
এক্সপেরিমেন্ট” নামে পরিচিত।
এই পরীক্ষা নিয়ে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছিলেন
this interpretation is, however, refuted, most
elegantly by your system of radioactive atom + Geiger counter + amplifier +
charge of gun powder + cat in a box, in which the psi-function of the system
contains the cat both alive and blown to bits. Is the state of the cat to be
created only when a physicist investigates the situation at some definite time?
যদিও কোয়ান্টাম মেকানিক্স খুব ক্ষুদ্র জিনিসের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, তবুও এই পরীক্ষার প্রাসঙ্গিকতা একটুও কম নয়।শ্রয়ডিঙ্গার এই পরীক্ষার দ্বারা বোঝাতে চেয়েছিলেন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ভুলভাল ব্যাখ্যা দিলে কিরকম অদ্ভুত ও অবাস্তব পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই পরীক্ষার কথা মাথায় রেখেই Many Worlds interpretation এর মতো মতবাদ পরে এসেছে। শুধু তাই নয় এই Copenhagen interpretation এর অসম্পূর্ণতাকে নির্দেশ করে এসেছে EPR Paradox।
যাইহোক এতক্ষণ সময় নিয়ে আমার ভাষায় বেড়ালের গল্প পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ফুটনোটগুলি:
[1] Copenhagen interpretation - Wikipedia
[2] Wave function collapse - Wikipedia
[4] Schrödinger’s Cat: Explained
[5] Schrödinger's cat: A thought experiment in quantum mechanics - Chad Orzel
[6] What did Schrodinger's Cat experiment prove?
[7] Many-worlds interpretation - Wikipedia
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন